টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে শ্বশুরবাড়ী থেকে জামাইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে ধনবাড়ী থানা পুলিশ। শনিবার(২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের পলিশারপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের প্যারিআটা গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে আনছার আলী (৫৭) একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী বীরতারা ইউনিয়নের পালিশারপাড় গ্রামের কাবেল উদ্দিনের মেয়ে প্রায় ২৪ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবনে তিনটি পুত্র সন্তান হয়। বিগত কয়েক বছর আগে থেকেই আনছার আলী ও তার স্ত্রী লাভলী বেগমের মধ্যে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো।
নিহত আনছার আলীর প্রতিবেশী ও তার স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার(২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলেও তাদের মধ্যে টাকা—পয়সার ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। ঝগড়া শেষে আনছার আলীর স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ী থেকে রাগ করে বাড়ী থেকে চলে যায়। এক পর্যায়ে আনছার আলী তার স্ত্রী কে খুঁজতে তার শ্বশুর বাড়ী যায়। হঠাৎ করেই শনিবার সকাল বেলা নিহত আনছার আলীর স্ত্রী ইউপি সদস্য লাভলী বেগমকে ফোন করে তার স্বামীর বাড়ীর লোকজনকে জানায় তার স্বামী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
নিহত আনছার আলীর বোন হাসনা বেগম, ও ভাই লাল মিয়া জানান, আমাদের ভাবি ফোন দিয়ে যখন সকাল বেলা জানিয়েছে তখনই আমরা আমার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ীতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি তাদের বাড়ীর দক্ষিণ পাশের একটি গাছের বাগানে জিগা গাছের সাথে আমাদের ভাইয়ের দেহটি ঝুলে আছে। মুখে উড়না বাঁধা ও আনছার আলীর স্ত্রীর কাপড় দিয়ে দুই পা বাঁধা অবস্থায় গলায় রশি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে আনছার আলীর মরদেহটি।
আমার ভাইকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে আমরা ধারনা করছি। কারণ আমার ভাবি মহিলা মেম্বার হওয়ার পর থেকেই তার চলাফেরা মোটেই ভালো ছিলো না। ভাইয়ের কথা মত চলতো না, শুধু তাই নয় পর পুরুষের সাথে সে কথাবার্তা বলতো। এইসকল কর্মকান্ড মোটেই ভাই পছন্দ করতো না। তাকে নিষেধ করলে সে ও তার ছেলেদের কে সাথে নিয়ে ভাইকে মারপিট করতো। এমন অনেক ঘটনায় এলাকায় পারিবারিকভাবে সালিশ হয়েছে। ভাই তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজনকে বললেও তারা কোন কর্ণপাত করেননি। আমার মনে হয় ভাবি রাগ করে বাবার বাড়ী যেতে পারে বলে ভাই হয়ত তাকে খোঁজার জন্য শ্বশুর বাড়ীতে গিয়েছিলো এই সুযোগে আমার ভাবি লাভলী সে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ভাইকে মেরে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে, যাতে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে পারে।
এঘটনায় সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি দাবী করছি।
নিহত আনছার আলীর বড় ছেলে অন্তর মিয়া জানান, আমার বাবাকে কে বা কারা হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে জানিনা। তবে মার সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। বাবার দুই পা যে কাপড়ে বাঁধা ছিলো সে কাপড় টা আমার মায়ের ব্যবহারের কাপড়। তবে হত্যাকারী যেই হোক তার বিচার চাই আমি।
পাইস্কা ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, আমার পরিষদের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা ইউপি সদস্য লাভলী বেগমের স্বামীর ঝুলন্ত লাশ তার শ্বশুর বাড়ী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। লোক হিসেবে আনছার আলী অনেক ভালো ছিলো। তবে মাঝে মধ্যেই তারা স্বামী স্ত্রী দু’জনের মাঝে ঝগড়া বিবাদ হতো। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে যদি হত্যা হয়ে থাকে তাহলে আনছার আলীর হত্যাকারীদের সঠিক বিচার দাবী করছি।
ঘটনায় নিহত আনছার আলীর শ্বশুরবাড়ীতে জানতে গেলে কোন লোকজনকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী জানান, খবর পেয়ে আনছার আলীর শ্বশুর বাড়ী থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর আসল কারন জানাযাবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত আনসার আলীর স্ত্রী মহিলা মেম্বার লাভলী বেগম ও তার সন্তানদের থানায় হেফাজতে আনা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।