গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারী এক ছাত্রীকে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটকের পর গণধোলাই দিয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
আটক ছাত্রলীগ কর্মী কটা ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলীর ক্যাডার ও ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। আরেক জনের নাম সানি। সেও ছাত্রলীগের কর্মী ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। তারা নগরীর পঞ্চবটি এলাকার বাসিন্দা।শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাদের পদ্মার দুর্গম চর থেকে তাদের আটক করা হয়।
জানা গেছে, বিকেলে রাজশাহী রেল স্টেশন এলাকায় ছাত্র-জনতার হাতে ধরা পড়ে সানি। এসময় গত ৫ আগস্ট এক ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি সামনে আসে। সানি বিষয়টি স্বীকার করে আরও ছয়-সাতজনের নাম বলেন। তাদের একজন কটা। এসময় সানিকে ধরে কটার সন্ধানে পঞ্চবটির নদীপাড়ে আসে শিক্ষার্থীরা।
কটা বিষয়টি টের পেয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে চরে গিয়ে ওঠে। সেখানে ধরা পড়ে ছাত্র-জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয় কটা। তাকে মারধরের কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।সনি দিনমজুরের কাজ করেন। কটা ভ্যানচালক। তারা ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, এই ছাত্রলীগের কর্মীরা (৫ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল। আটক দুজন ধ.র্ষ.ণ ও হ.ত্যার কথা তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসুদ নামে আরেক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কটা ভ্যান চালক আর সানি নগরীতে একটি প্রেসে কাজ করেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে তাদের নগরীর বোয়ালিয়া থানায় দেওয়া হয়। সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্বার জানান, (৫ আগস্ট) থেকেই তারা শুনছিলেন যে সেদিন দুপুরে এক ছাত্রীকে মিছিল থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের পর বুক চিরে লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনভাবেই তারা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না।
দুপুরে তারা খবর পান, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে একজন আটক হয়েছেন যিনি ৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা রেল স্টেশনে গিয়ে সনিকে পান।তখন সনি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কটাকে খুঁজতে থাকেন তারা। বিকাল ৫টার দিকে নগরীর আলুপট্টি পদ্মার পাড় এলাকায় অভিযুক্ত কটাকে খুঁজে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা তাকে ধরতে গেলেই তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা নদীতে সাঁতরে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন তাকে গণপিটুনি দিতে শুরু করেন। সেখানে তাকে উদ্ধার করে সন্ধ্যায় বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়।
সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্বার দাবি করেন, সনি ও কটা দুজনেই তাদের কাছে ধর্ষণ ও হত্যার পর বুক চিরে দিয়ে লাশ পানিতে ভাসানোর কথা স্বীকার করেছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রী কে তা জানেন না জানিয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, হয়তো অভিভাবক লজ্জায় এমন ঘটনা প্রকাশ করেননি। এ জন্য থানায় কোন জিডিও হয়নি। মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যায়নি। রাত ৮টার সময়।
পুলিশ আহত দুজন’কে হাসপাতালে নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাঁধা দেন। তারা বলেন, ধর্ষকে’র কোন চিকিৎসা করতে দেওয়া হবে না। একপর্যায়ে সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার শিক্ষার্থীদের বোঝালে তারা চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হন।ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। তারা নিজেরাও ওই ছাত্রীকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। থানায় এসেছিলেন মহানগর যুবদলের সদস্য তানভীর আহমেদ সুইট। তিনি দাবি করেন, একজন নয়; পঞ্চবটি শশ্মানঘাটে দুই ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর পেট কেটে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনিও কারও পরিচয় জানেন না।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, ৫ আগস্ট এমন কোন ঘটনা এলাকায় ঘটেছে কি না তা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে কোন অভিভাবকও কিছু জানান’নি আটক দুজন আহত, তাই তাদের হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি।অভিযোগ না এলে কী করবেন, এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, যারা ধরে এনেছেন, তাদের কাছ থেকে শুনব। কেউ অভিযোগ করেন কী না দেখব। তারা কোন অভিযোগ না করলে দেখব তাদের নামে অন্য কোন অভিযোগ আছে কী না। সে মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।