মুশফিকুর রহিমকে ছুটির দিনেও মাঠে দেখা যায়। ফিটনেস অনুশীলন করছেন, নয়তো ব্যাটিং। করোনাকালেও তিনি থেমে নেই। ঘরে ট্রেডমিলে দৌড়েছেন, কখনো নেমে এসেছেন বাসার সামনের রাস্তায়, কখনো একাকী চলে গেছেন দূরের নির্জন মাঠে। মহামারির এই সময়ে বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যুক্ত হয়েছেন নানা জনহিতকর কাজেও। প্রথম আলোকে দেওয়া তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে খেলার বাইরের অন্য এক মুশফিকুর রহিমের ছবি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক মাহমুদ।
আপাতত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই। তবু করোনার মধ্যেই অনুশীলন চলছে, খেলা চলছে। ক্রিকেট নিয়ে সময়টা কেমন কাটছে আপনার?
করোনাভাইরাস আগামী কয়েক বছরেও যাবে কি না সন্দেহ। তাই বলে জীবন-জীবিকা তো থেমে থাকবে না। আমি খেলোয়াড় বলে নই; চাকরিজীবী বলেন, ব্যবসায়ী বলেন, রিকশাচালক বলেন—সবার ক্ষেত্রেই একই কথা। সারা বিশ্বে যে করোনা পরিস্থিতি, তাতে লকডাউন এখনো থাকা উচিত বা নিয়মকানুন আরও কঠোর হওয়া উচিত। কিন্তু এ রকম করে আর কত দিন!
আমার কথাই যদি বলি, বিসিবির বেতন ছাড়া আমার অন্য কোনো আয় নেই। আমরা যদি না খেলি, আমাদের জন্যও জীবনটা কঠিন হয়ে যায়। আমি মনে করি, যতটুকু সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করে সবারই স্বাভাবিক জীবনের কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে আগে স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিসিবিকে ধন্যবাদ দেব, প্রেসিডেন্টস কাপ টুর্নামেন্টটা আমরা খুব ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না হোক, ঘরোয়া ক্রিকেটও যদি এভাবে শুরু করা যায়, তাহলেও হয়। আমরা ২০-৩০ জন খেলোয়াড়ই তো শুধু নই, বাইরেও অনেক খেলোয়াড় আছে। তারাও জীবিকা নির্বাহ করে খেলা দিয়েই। ঘরোয়া ক্রিকেটটা শুরু হলে তাদের অনেক উপকার হবে।
নিজের নামে ‘এম আর ফাউন্ডেশন’ গঠন করলেন। এটা করার চিন্তা কি আগে থেকেই ছিল?
আমার অনেক আগে থেকেই চিন্তা ছিল এ রকম কিছু করার। কিন্তু এটার জন্য যে রকম সময় দরকার, সেটা পাচ্ছিলাম না। খেলা নিয়ে এত ব্যস্ততা থাকি যে দু-তিন মাস সময় পাওয়া সত্যিই কঠিন। এখানে কাগজপত্রের অনেক কাজ থাকে, অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যাপার থাকে। করোনায় খেলা না হওয়ায় সময় পেলাম এটা নিয়ে কাজ করার। এখনো কিছু কাজ চলছে। সবকিছু গোছাতে আরও সময় লাগবে।
ফাউন্ডেশন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমার ইচ্ছে একটা হাসপাতাল করব, যেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা হবে। এটাই আমার মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের অধীনে আমার জেলা বগুড়ায় একটা ক্রিকেট একাডেমি করার পরিকল্পনা আছে। এখন আমরা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। বগুড়ায় কিছু দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে আমরা ৮-১০ বছর যাবৎ মাসিক বৃত্তি দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। আমরা চাইছি এটা আরও বড় পরিসরে করতে। বগুড়া থেকে আমরা যেন এটা পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষকেও সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।
করোনার সময়ে আপনি কিছু সামাজিক কাজ করেছেন। অসহায় মানুষকে সাহায্য করেছেন, তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ব্যাট নিলামে বিক্রি করেছেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তাটা কীভাবে এল?
এ রকম আগেও করেছি। অন্য খেলোয়াড়েরাও করেছেন। আর শুধু খেলোয়াড়েরা না, অন্য অনেকেই অনেকভাবে করেছেন। তবে হ্যাঁ, করোনার সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাড়নাটা আরও বেশি এসেছে। মানুষের অসহায় অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, আমি যদি অন্তত ১০ জন মানুষকেও সাহায্য করতে পারি, সেটা যেভাবেই হোক, তাহলে মনে করব মানুষের কাজে একটু হলেও লাগতে পেরেছি। ব্যাট নিলামে তোলার চিন্তাটা করোনার কারণেই মাথায় আসে। এটা থেকে বড় একটা অঙ্কের অর্থ পেয়ে যদি মানুষকে সাহায্য করতে পারি। শহীদ আফ্রিদিকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে তিনি এই মহৎ কাজে আমাকে সাহায্য করেছেন।
আমার ইচ্ছে একটা হাসপাতাল করব, যেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা হবে। এটাই আমার মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের অধীনে আমার জেলা বগুড়ায় একটা ক্রিকেট একাডেমি করার পরিকল্পনা আছে।
(প্রথম আলো)